সাতক্ষীরা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় বিমান হামলায় আরেক জাতিসংঘ কর্মী নিহত

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৭:৫১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ৭৭ বার পঠিত

গাজার রাফায় একটি গাড়িতে বিমান হামলায় জাতিসংঘের এক বিদেশি কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার এ ঘটনায় আরেকজন আহত হন। জাতিসংঘের এ দুই কর্মী দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। নিহত ওই কর্মী ভারতীয়, তিনি জাতিসংঘের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ত্রাণকর্মীদের অবস্থান জেনেই হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় রাফায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলা চলছে। কাতারের আমির বলছেন, রাফায় হামলা যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচলাবস্থায় ফেলেছে।
মঙ্গলবার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ইসরায়েলের বাহিনী গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা কাজে অংশ নেওয়া ত্রাণকর্মীদের বহর ও ভবনের ওপর অন্তত আটবার হামলা করেছে। এসব হামলার আগে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ কোনো সতর্কতা দেয় না। এসব ঘটনায় দুই শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্প্রতি তদন্তে উঠে এসেছে, এ আট হামলার মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ত্রাণকর্মীদের।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, সর্বশেষ নিহত জাতিসংঘ কর্মী ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা সদস্য। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গাড়িটি যুদ্ধক্ষেত্রে আটকা পড়েছিল। হাসপাতালের পরিদর্শনের বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়নি। এক বিবৃতিতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন হাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৮৮ কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ১ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত কর্মী নিহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনই যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষোভ বাড়ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেল গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলেন। মেজর হ্যারসন ম্যান নামের ওই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিআইএ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও অনাহারে রাখতে পারছে ইসরায়েল। সোমবার হ্যারিসন লিংকডইনে পদত্যাগপত্রটি প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
চলমান পরিস্থিতিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কাতার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এরই মধ্যে রাফা থেকে আবারও সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার তারা রাফায় হামলা নিয়ে শুনানি করবেন। আন্তর্জাতিক সহযোগীদের বারত সত্ত্বেও রাফায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। সেখানে জয় পাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একদিনে শিশুসহ আরও ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অন্যদিকে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েল তাদের পতাকা উড়িয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গাজায় বিমান হামলায় আরেক জাতিসংঘ কর্মী নিহত

আপডেট সময় : ০৭:৫১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

গাজার রাফায় একটি গাড়িতে বিমান হামলায় জাতিসংঘের এক বিদেশি কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার এ ঘটনায় আরেকজন আহত হন। জাতিসংঘের এ দুই কর্মী দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। নিহত ওই কর্মী ভারতীয়, তিনি জাতিসংঘের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ত্রাণকর্মীদের অবস্থান জেনেই হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় রাফায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলা চলছে। কাতারের আমির বলছেন, রাফায় হামলা যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচলাবস্থায় ফেলেছে।
মঙ্গলবার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ইসরায়েলের বাহিনী গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা কাজে অংশ নেওয়া ত্রাণকর্মীদের বহর ও ভবনের ওপর অন্তত আটবার হামলা করেছে। এসব হামলার আগে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ কোনো সতর্কতা দেয় না। এসব ঘটনায় দুই শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্প্রতি তদন্তে উঠে এসেছে, এ আট হামলার মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ত্রাণকর্মীদের।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, সর্বশেষ নিহত জাতিসংঘ কর্মী ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা সদস্য। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গাড়িটি যুদ্ধক্ষেত্রে আটকা পড়েছিল। হাসপাতালের পরিদর্শনের বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়নি। এক বিবৃতিতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন হাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৮৮ কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ১ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত কর্মী নিহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনই যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষোভ বাড়ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেল গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলেন। মেজর হ্যারসন ম্যান নামের ওই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিআইএ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও অনাহারে রাখতে পারছে ইসরায়েল। সোমবার হ্যারিসন লিংকডইনে পদত্যাগপত্রটি প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
চলমান পরিস্থিতিতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কাতার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এরই মধ্যে রাফা থেকে আবারও সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার তারা রাফায় হামলা নিয়ে শুনানি করবেন। আন্তর্জাতিক সহযোগীদের বারত সত্ত্বেও রাফায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। সেখানে জয় পাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একদিনে শিশুসহ আরও ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অন্যদিকে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েল তাদের পতাকা উড়িয়েছে।