সাতক্ষীরা ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বেসরকারি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করণ খাতে বরাদ্দ!

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ২৬১ বার পঠিত

সারাদেশে যোগ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) এমপিওভুক্ত দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ২৫০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ধরে এ খাতে ২৫০ কোটি বরাদ্দ দিলেও আসন্ন অর্থ বছরের বাজেটে সেই টাকা নাও পেতে পারে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী বছরে এমপিওভুক্ত নাও হতে পারেন। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সংসদে আগামী অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। আর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে সেই বাজেট। এরমধ্যে চলতি অর্থ বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব কষছেন তারা। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের জন্য বরাদ্দের আংশিক বা অর্ধেক টাকা খরচ হলেও এমপিও খাতের জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও শাখা সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১০ সালের জুনে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর এমপিওভুক্ত বন্ধ রাখে সরকার। এতে কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য হওয়ার পরও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা টানা আন্দোলন করেছে। এরপর প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালে ২ হাজার ৭৬৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সালে সর্বশেষ এমপিওভুক্তি দেয় সরকার। যদিও এরমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের আধা-সরকারিপত্রের (ডিও লেটার) দুই দফা বিশেষ বিবেচনায় আরও হাজার খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়।

বাজেট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল তাই প্রতিবছর যেন এমপিওভুক্ত করার কাজটি বহাল থাকে। এরপর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরের পর করোনা মহামারির কারণে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরে ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য চাওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় দুই বিভাগকে প্রতি অর্থ বছরে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এ খাতের বরাদ্দ ফেরত যায়। চলতি অর্থ বছর ২০২৩-২৪ এ খাতে টাকা ফেরত যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি বছর বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করায় নতুন করে আবেদন নেওয়া হয়নি। আগামীতে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যেতে পারে। তাই এবার যেহেতু এমপিওভুক্ত হয়নি তাই এ খাতের টাকা খরচ হয়নি। আগামী বাজেটে এটার সংস্থাপন করা হয়।

সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পরও এমপিওখাতে টাকা খরচ করতে না পারায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন নবী ডলার। তিনি বলেন, এক সময় সরকার বরাদ্দের জন্য এমপিও দিতে পারতো না আর এখন সরকার বরাদ্দ দেয় কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারে না। এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বছর এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি টানা এ খাতের বরাদ্দ ব্যবহার করতে না পারে তাহলে একসময় হয়ত এ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন চাইলেও এ খাতে বরাদ্দ আনা সম্ভব হবে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বেসরকারি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করণ খাতে বরাদ্দ!

আপডেট সময় : ০৮:১৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

সারাদেশে যোগ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) এমপিওভুক্ত দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ২৫০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ধরে এ খাতে ২৫০ কোটি বরাদ্দ দিলেও আসন্ন অর্থ বছরের বাজেটে সেই টাকা নাও পেতে পারে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী বছরে এমপিওভুক্ত নাও হতে পারেন। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সংসদে আগামী অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। আর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে সেই বাজেট। এরমধ্যে চলতি অর্থ বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব কষছেন তারা। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের জন্য বরাদ্দের আংশিক বা অর্ধেক টাকা খরচ হলেও এমপিও খাতের জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও শাখা সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১০ সালের জুনে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর এমপিওভুক্ত বন্ধ রাখে সরকার। এতে কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য হওয়ার পরও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা টানা আন্দোলন করেছে। এরপর প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালে ২ হাজার ৭৬৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সালে সর্বশেষ এমপিওভুক্তি দেয় সরকার। যদিও এরমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের আধা-সরকারিপত্রের (ডিও লেটার) দুই দফা বিশেষ বিবেচনায় আরও হাজার খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়।

বাজেট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল তাই প্রতিবছর যেন এমপিওভুক্ত করার কাজটি বহাল থাকে। এরপর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরের পর করোনা মহামারির কারণে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরে ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য চাওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় দুই বিভাগকে প্রতি অর্থ বছরে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এ খাতের বরাদ্দ ফেরত যায়। চলতি অর্থ বছর ২০২৩-২৪ এ খাতে টাকা ফেরত যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি বছর বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করায় নতুন করে আবেদন নেওয়া হয়নি। আগামীতে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যেতে পারে। তাই এবার যেহেতু এমপিওভুক্ত হয়নি তাই এ খাতের টাকা খরচ হয়নি। আগামী বাজেটে এটার সংস্থাপন করা হয়।

সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পরও এমপিওখাতে টাকা খরচ করতে না পারায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন নবী ডলার। তিনি বলেন, এক সময় সরকার বরাদ্দের জন্য এমপিও দিতে পারতো না আর এখন সরকার বরাদ্দ দেয় কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারে না। এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বছর এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি টানা এ খাতের বরাদ্দ ব্যবহার করতে না পারে তাহলে একসময় হয়ত এ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন চাইলেও এ খাতে বরাদ্দ আনা সম্ভব হবে না।