সাতক্ষীরা ১২:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি দেশভাগ পরবর্তী উদ্বাস্তু মানুষের জীবন সংগ্রাম শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আটক সাবেক হেভিওয়েট মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আদালত চত্বরে জুতা-ডিম নিক্ষেপ ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন ৬ দিন ও জাসদের ইনুর ৭ দিন রিমান্ড মঞ্জুর আইসিটি’র ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ, পাসওয়ার্ড জানেন শুধু পলক আর.জি.কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড! বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ! বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠার দায়িত্ব নিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস বঙ্গভবনে নবীন-প্রবীণের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ একটু পরেই

৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ৪ বার পঠিত

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দিবসগুলো বাতিল হচ্ছে বলে জানানো হয়। তাতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি এক বৈঠকে আটটি দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যে দিবসগুলো উদ্‌যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

বিভিন্ন সময়ে এই দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন বা পালন–সংক্রান্ত পরিপত্রের ক শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তভুক্ত করে তখন প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই ভাষণকে ২০১৭ সালে ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেছিল। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে দিবসটি আবার পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ছয়টি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছিল। অবশ্য বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত আদেশ সাপেক্ষে দিবসটি পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে না এই সরকার
আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যে দিবসগুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট আদর্শ এবং সেই আদর্শকে ধারণ ও চর্চার জন্য দিবসগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে যদি মনে হয় এ রকম আরও দিবস বাতিল করা প্রয়োজন বা কিছু অগুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে, তাহলে সেগুলোও বাতিল হতে পারে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নতুন দিবসও যুক্ত হতে পারে। যে রকম জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতরে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ, স্বাভাবিকভাবে এখানেও কিছু দিবস যুক্ত হবে।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে কি না এই সরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই না।’ তিনি বলেন, ‘এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু বাহান্ন থেকে শুরু হয়ে যায়নি, আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই আছে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, সাতচল্লিশের লড়াই আছে এই ভূখণ্ডের মানুষের, একাত্তরের লড়াই আছে, নব্বই আছে, চব্বিশ আছে।’

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন মন্ডল, মাওলানা ভাসানীসহ অনেক মানুষের লড়াই আছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো মনে করি এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে, যাঁদের অবদানের ফলে এই ভূখণ্ড, এই রাষ্ট্র, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ফলে আমরা এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের যে বহুমুখিতা রয়েছে, নানা মাত্রা রয়েছে, যেটাকে আওয়ামী লীগ এত দিন অস্বীকার করেছে। মাওলানা ভাসানীর অবদান তারা সব সময় অস্বীকার করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তাঁকে ইতিহাসে রাখেনি। এখন সেই ইতিহাসগুলো নিয়ে আসতে হবে।’

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস, গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা সেদিন হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করছি না যে সেটি জাতীয় দিবস হওয়ার মতো গুরুত্ব বহন করে। অনেক কিছু হয়তো আমাদের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসলে ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো ৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা ইতিহাসের অংশ, নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি…থাকবে। কিন্তু সেটি দিবস হিসেবে যে চর্চা, এটির একটি রাজনীতি আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকার সেই রাজনীতি চলতে দিতে পারে না।’

আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, গুম-খুন করে, গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল।…কারা তাঁকে জাতির পিতা বলল, কারা জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, এই নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা তো বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসলে আনতে হবে।’

আওয়ামী লীগের নিন্দা

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট শোক দিবসসহ বিভিন্ন দিবস বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ এক বিবৃতিতে সরকারের এ উদ্যোগকে ‘প্রতিহিংসামূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলা ও বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইতিহাসের সন্তান জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার বিশ্বস্ত সহকর্মীরা, দেশের মুক্তিকামী জনতা ও তাঁর পরিবারের অবদান অমোচনীয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হচ্ছে মুক্তির লড়াইয়ের সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকী স্থাপনা। এসবের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতীয় দিবসসমূহ রাষ্ট্রাচার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা এহেন প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি

আপডেট সময় : ০৬:৫৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দিবসগুলো বাতিল হচ্ছে বলে জানানো হয়। তাতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি এক বৈঠকে আটটি দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যে দিবসগুলো উদ্‌যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

বিভিন্ন সময়ে এই দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন বা পালন–সংক্রান্ত পরিপত্রের ক শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তভুক্ত করে তখন প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই ভাষণকে ২০১৭ সালে ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেছিল। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে দিবসটি আবার পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ছয়টি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছিল। অবশ্য বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত আদেশ সাপেক্ষে দিবসটি পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে না এই সরকার
আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যে দিবসগুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট আদর্শ এবং সেই আদর্শকে ধারণ ও চর্চার জন্য দিবসগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে যদি মনে হয় এ রকম আরও দিবস বাতিল করা প্রয়োজন বা কিছু অগুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে, তাহলে সেগুলোও বাতিল হতে পারে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নতুন দিবসও যুক্ত হতে পারে। যে রকম জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতরে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ, স্বাভাবিকভাবে এখানেও কিছু দিবস যুক্ত হবে।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে কি না এই সরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই না।’ তিনি বলেন, ‘এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু বাহান্ন থেকে শুরু হয়ে যায়নি, আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই আছে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, সাতচল্লিশের লড়াই আছে এই ভূখণ্ডের মানুষের, একাত্তরের লড়াই আছে, নব্বই আছে, চব্বিশ আছে।’

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন মন্ডল, মাওলানা ভাসানীসহ অনেক মানুষের লড়াই আছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো মনে করি এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে, যাঁদের অবদানের ফলে এই ভূখণ্ড, এই রাষ্ট্র, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ফলে আমরা এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের যে বহুমুখিতা রয়েছে, নানা মাত্রা রয়েছে, যেটাকে আওয়ামী লীগ এত দিন অস্বীকার করেছে। মাওলানা ভাসানীর অবদান তারা সব সময় অস্বীকার করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তাঁকে ইতিহাসে রাখেনি। এখন সেই ইতিহাসগুলো নিয়ে আসতে হবে।’

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস, গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা সেদিন হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করছি না যে সেটি জাতীয় দিবস হওয়ার মতো গুরুত্ব বহন করে। অনেক কিছু হয়তো আমাদের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসলে ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো ৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা ইতিহাসের অংশ, নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি…থাকবে। কিন্তু সেটি দিবস হিসেবে যে চর্চা, এটির একটি রাজনীতি আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকার সেই রাজনীতি চলতে দিতে পারে না।’

আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, গুম-খুন করে, গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল।…কারা তাঁকে জাতির পিতা বলল, কারা জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, এই নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা তো বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসলে আনতে হবে।’

আওয়ামী লীগের নিন্দা

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট শোক দিবসসহ বিভিন্ন দিবস বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ এক বিবৃতিতে সরকারের এ উদ্যোগকে ‘প্রতিহিংসামূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলা ও বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইতিহাসের সন্তান জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার বিশ্বস্ত সহকর্মীরা, দেশের মুক্তিকামী জনতা ও তাঁর পরিবারের অবদান অমোচনীয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হচ্ছে মুক্তির লড়াইয়ের সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকী স্থাপনা। এসবের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতীয় দিবসসমূহ রাষ্ট্রাচার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা এহেন প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’