সাতক্ষীরা ১২:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ‘টার্গেটেড কিলিং’–এর প্রতিবাদে দৃকের সংহতি প্রকাশ এডভোকেট জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় বাসদের নিন্দা ৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি দেশভাগ পরবর্তী উদ্বাস্তু মানুষের জীবন সংগ্রাম শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আটক সাবেক হেভিওয়েট মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আদালত চত্বরে জুতা-ডিম নিক্ষেপ ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন ৬ দিন ও জাসদের ইনুর ৭ দিন রিমান্ড মঞ্জুর আইসিটি’র ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ, পাসওয়ার্ড জানেন শুধু পলক আর.জি.কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড! বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ!

১৭ বছর পর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি উঠল ভারতের অধিনায়কের হাতে

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ ২৮০ বার পঠিত

৫ ওভার বাকি থাকতেও মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়তো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পাচ্ছে। সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’-এরও। যে দলের কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালেই ওঠা হয়নি আগে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ফাইনালে উঠেই এমন খেলছে যে ভারতের ফিরে আসা সম্ভব বলে কজন ভেবেছিলেন, তা একটা প্রশ্ন বটে।
ফিরে আসার দুর্দান্ত এক গল্প লিখে শেষ পর্যন্ত ভারতই চ্যাম্পিয়ন। সেই ২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর আরেকবার। দক্ষিণ আফ্রিকা কিসে সান্ত্বনা খুঁজবে? ফাইনালে তো ওঠা হয়েছে এবার, পরেরবার নয় শিরোপা—না, এতেও মনে হয় না সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। এভাবে ম্যাচটা হাতের মুঠো থেকে গলে যেতে দেওয়ার সান্ত্বনা আসলে কিছুতেই হয় না।

বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছিলাম। এত দিন প্রশ্নাতীতভাবে তা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কোনো খেলায় আর কোনো দল এই ‘চোকার্স’ অপবাদ এভাবে বয়ে বেড়ায়নি। এই বিশ্বকাপে একের পর এক ক্লোজ ম্যাচ জিতে, অষ্টমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল-জুজু জয় করে ফাইনালের আগেই যা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে তাদের। বিশ্বকাপ জিতলে যা চিরতরে গা থেকে খসিয়ে দিত ওই দুঃসহ তকমাটা। যে অবস্থা থেকে ফাইনালটা হেরেছে, তাতে ফিসফাস করে ওই কথাটা আবারও উঠতেই পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে অবশ্যই উঠত না। উঠত না আরেকটি কারণেও। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন চোকার্স হিসেবে যে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর গত ১১ বছরে পাঁচটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে ভারত। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে এরই মধ্যে। সেই পাঁচ ফাইনালেই একটা জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে। সব কটিতেই হেরেছে ভারত। টানা ষষ্ঠ ফাইনালে হারলে তাদের চোকার্স বলায় কোনো অন্যায় হতো না।

আগের ৫টি ফাইনালে হারা অনেকেই আছেন ভারতের এই দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৫ ওভার বাকি থাকতে আবারও সেটিকেই অবধারিত পরিণতি বলে কি মনে হয়নি তাঁদের! ৩৬ বলে যখন ৫৪ রান লাগে, হাইনরিখ ক্লাসেন এই ফাইনালের ভাগ্য লিখে দিয়েছিলেন বলেই তো মনে হয়েছিল। অক্ষর প্যাটেলের ওই ওভার থেকে ২৪ রান। দুটি ওয়াইড বলে ২ রান। বাকি ২২ রানই ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। খুবই সহজ হয়ে যাওয়া সমীকরণ থেকে ম্যাচটা যে এমন রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির দিকে যাবে, এ বোধ হয় শুধু টি-টোয়েন্টিতেই সম্ভব। যেখানে একটা ওভারই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।

৫ ওভার বাকি থাকতেও মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়তো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পাচ্ছে। সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’-এরও। যে দলের কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালেই ওঠা হয়নি আগে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ফাইনালে উঠেই এমন খেলছে যে ভারতের ফিরে আসা সম্ভব বলে কজন ভেবেছিলেন, তা একটা প্রশ্ন বটে।
ফিরে আসার দুর্দান্ত এক গল্প লিখে শেষ পর্যন্ত ভারতই চ্যাম্পিয়ন। সেই ২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর আরেকবার। দক্ষিণ আফ্রিকা কিসে সান্ত্বনা খুঁজবে? ফাইনালে তো ওঠা হয়েছে এবার, পরেরবার নয় শিরোপা—না, এতেও মনে হয় না সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। এভাবে ম্যাচটা হাতের মুঠো থেকে গলে যেতে দেওয়ার সান্ত্বনা আসলে কিছুতেই হয় না।

বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছিলাম। এত দিন প্রশ্নাতীতভাবে তা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কোনো খেলায় আর কোনো দল এই ‘চোকার্স’ অপবাদ এভাবে বয়ে বেড়ায়নি। এই বিশ্বকাপে একের পর এক ক্লোজ ম্যাচ জিতে, অষ্টমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল-জুজু জয় করে ফাইনালের আগেই যা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে তাদের। বিশ্বকাপ জিতলে যা চিরতরে গা থেকে খসিয়ে দিত ওই দুঃসহ তকমাটা। যে অবস্থা থেকে ফাইনালটা হেরেছে, তাতে ফিসফাস করে ওই কথাটা আবারও উঠতেই পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে অবশ্যই উঠত না। উঠত না আরেকটি কারণেও। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন চোকার্স হিসেবে যে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর গত ১১ বছরে পাঁচটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে ভারত। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে এরই মধ্যে। সেই পাঁচ ফাইনালেই একটা জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে। সব কটিতেই হেরেছে ভারত। টানা ষষ্ঠ ফাইনালে হারলে তাদের চোকার্স বলায় কোনো অন্যায় হতো না।

আগের ৫টি ফাইনালে হারা অনেকেই আছেন ভারতের এই দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৫ ওভার বাকি থাকতে আবারও সেটিকেই অবধারিত পরিণতি বলে কি মনে হয়নি তাঁদের! ৩৬ বলে যখন ৫৪ রান লাগে, হাইনরিখ ক্লাসেন এই ফাইনালের ভাগ্য লিখে দিয়েছিলেন বলেই তো মনে হয়েছিল। অক্ষর প্যাটেলের ওই ওভার থেকে ২৪ রান। দুটি ওয়াইড বলে ২ রান। বাকি ২২ রানই ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। খুবই সহজ হয়ে যাওয়া সমীকরণ থেকে ম্যাচটা যে এমন রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির দিকে যাবে, এ বোধ হয় শুধু টি-টোয়েন্টিতেই সম্ভব। যেখানে একটা ওভারই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।

৩০ বলে ৩০ রান লাগে, হাতে ৬ উইকেট। ক্লাসেনের সঙ্গে ব্যাটিং করছেন ডেভিড মিলার। এত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন যে কোথাও না কোথাও দুজনই হয়তো এক ওভারে ৩০ রান নিয়ে থাকবেন। ২৭ বলে ৫২ রান করে ক্লাসেন আউট হয়ে যাওয়ার পরও তো ম্যাচে প্রবল ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। এতটাই যে ভারতীয় টিভি রিপোর্টাররা মন খারাপ করে লাইভের জন্য প্রেসবক্স থেকে নিচে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
সেখান থেকে ম্যাচটা কিনা শেষ বলের আগেই শেষ।

ম্যাচশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়া
ম্যাচশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়াএএফপি
শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার ১০ রান লাগে। নো আর ওয়াইড না হলে তো ম্যাচ তখনই শেষ। হার্দিক পান্ডিয়া কি আর নো আর ওয়াইডের কোনো ঝুঁকি নেন। কোনোমতে বৈধ একটা বল করলেই তো হয়। তা করতেই মাঠে ভারতীয়দের বাঁধভাঙা আনন্দ। শুধুই আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের নয়, ১১ বছরে বারবার ফাইনাল থেকে শূন্য হাতে ফেরার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আনন্দও মিশে থাকল সেই উদ্‌যাপনে।

মনে আছে তো কীভাবে শুরু হয়েছিল এই ফাইনাল! প্রথম ৮ বলে ২৩ রান। পরের ৪ বলে ২ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আর কোনো ফাইনাল প্রথম মিনিট দশেকে দুই দলকেই এমন সমানভাবে আনন্দ দিয়েছে বলে মনে হয় না। মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম বলে রোহিত শর্মা সিঙ্গেল নেওয়ার পর কোহলির পরপর দুই চার। শেষ বলে আরেকটি। ইয়ানসেনের প্রথম ওভার থেকে ১৫ রান।

গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের কথা মনে করিয়ে দেওয়াটা সেখানেই শেষ করেননি ইয়ানসেন। ইডেন গার্ডেনে এই ভারতের বিপক্ষেই প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ১৭ রান। ৯.৪ ওভারে মোট ৯৪। এখানে ৪ ওভারে ৪৯। কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি খারাপ—এই তর্ক হতেই পারে। ইয়ানসেন দুটিকেই হয়তো এক ব্র্যাকেটে রাখবেন। দুটিতেই যে হেরেছে তাঁর দল।

ফাইনালের প্রথমার্ধ বিরাট কোহলির। এই বিশ্বকাপে অবশেষে রান পেলেন। আগের ৭ ইনিংসে ৭৫ রানের অচেনা কোহলি এদিন এক ইনিংসেই ৭৬। কিন্তু টি-টোয়েন্টির নিষ্ঠুর পৃথিবীতে রান করেও শান্তি নেই। কোহলির এই ইনিংস ভারতের কাজে এল, নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার—এই প্রশ্ন কিন্তু উঠে যাচ্ছিল। ১৭তম ওভারে ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি, যাতে চার মাত্র ৪টা, সর্বশেষটি সেই চতুর্থ ওভারে। ইনিংসটা নিয়ে অস্বস্তির কারণেই হয়তো ফিফটি করে ব্যাট তোলেননি।

এরপরই একটু খোলস ছেড়ে বেরোলেন। পরের ৩ বলে ১২ রান, যাতে একটি ছয় ও একটি চার। হাফ সেঞ্চুরির পর ১১ নম্বরে আউট। আগের ১০ বলে ২৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা বসে থাকায় তারপরও প্রশ্নটা উঠছিল। আরেকটু আগেই কি কোহলির গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা উচিত ছিল?

ভারত না জিতলে নির্ঘাত এ নিয়ে তুলকালাম হয়ে যেত। উল্টো বিরাট কোহলি এখন নায়ক। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে যিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের কথা জানিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপ জয়, নিজে ম্যাচসেরা—এমন সুন্দর বিদায় ক্রিকেট খুব বেশি দেখেনি।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

১৭ বছর পর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি উঠল ভারতের অধিনায়কের হাতে

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

৫ ওভার বাকি থাকতেও মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়তো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পাচ্ছে। সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’-এরও। যে দলের কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালেই ওঠা হয়নি আগে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ফাইনালে উঠেই এমন খেলছে যে ভারতের ফিরে আসা সম্ভব বলে কজন ভেবেছিলেন, তা একটা প্রশ্ন বটে।
ফিরে আসার দুর্দান্ত এক গল্প লিখে শেষ পর্যন্ত ভারতই চ্যাম্পিয়ন। সেই ২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর আরেকবার। দক্ষিণ আফ্রিকা কিসে সান্ত্বনা খুঁজবে? ফাইনালে তো ওঠা হয়েছে এবার, পরেরবার নয় শিরোপা—না, এতেও মনে হয় না সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। এভাবে ম্যাচটা হাতের মুঠো থেকে গলে যেতে দেওয়ার সান্ত্বনা আসলে কিছুতেই হয় না।

বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছিলাম। এত দিন প্রশ্নাতীতভাবে তা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কোনো খেলায় আর কোনো দল এই ‘চোকার্স’ অপবাদ এভাবে বয়ে বেড়ায়নি। এই বিশ্বকাপে একের পর এক ক্লোজ ম্যাচ জিতে, অষ্টমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল-জুজু জয় করে ফাইনালের আগেই যা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে তাদের। বিশ্বকাপ জিতলে যা চিরতরে গা থেকে খসিয়ে দিত ওই দুঃসহ তকমাটা। যে অবস্থা থেকে ফাইনালটা হেরেছে, তাতে ফিসফাস করে ওই কথাটা আবারও উঠতেই পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে অবশ্যই উঠত না। উঠত না আরেকটি কারণেও। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন চোকার্স হিসেবে যে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর গত ১১ বছরে পাঁচটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে ভারত। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে এরই মধ্যে। সেই পাঁচ ফাইনালেই একটা জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে। সব কটিতেই হেরেছে ভারত। টানা ষষ্ঠ ফাইনালে হারলে তাদের চোকার্স বলায় কোনো অন্যায় হতো না।

আগের ৫টি ফাইনালে হারা অনেকেই আছেন ভারতের এই দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৫ ওভার বাকি থাকতে আবারও সেটিকেই অবধারিত পরিণতি বলে কি মনে হয়নি তাঁদের! ৩৬ বলে যখন ৫৪ রান লাগে, হাইনরিখ ক্লাসেন এই ফাইনালের ভাগ্য লিখে দিয়েছিলেন বলেই তো মনে হয়েছিল। অক্ষর প্যাটেলের ওই ওভার থেকে ২৪ রান। দুটি ওয়াইড বলে ২ রান। বাকি ২২ রানই ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। খুবই সহজ হয়ে যাওয়া সমীকরণ থেকে ম্যাচটা যে এমন রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির দিকে যাবে, এ বোধ হয় শুধু টি-টোয়েন্টিতেই সম্ভব। যেখানে একটা ওভারই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।

৫ ওভার বাকি থাকতেও মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়তো নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পাচ্ছে। সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’-এরও। যে দলের কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালেই ওঠা হয়নি আগে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ফাইনালে উঠেই এমন খেলছে যে ভারতের ফিরে আসা সম্ভব বলে কজন ভেবেছিলেন, তা একটা প্রশ্ন বটে।
ফিরে আসার দুর্দান্ত এক গল্প লিখে শেষ পর্যন্ত ভারতই চ্যাম্পিয়ন। সেই ২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর আরেকবার। দক্ষিণ আফ্রিকা কিসে সান্ত্বনা খুঁজবে? ফাইনালে তো ওঠা হয়েছে এবার, পরেরবার নয় শিরোপা—না, এতেও মনে হয় না সান্ত্বনা পাওয়া যাবে। এভাবে ম্যাচটা হাতের মুঠো থেকে গলে যেতে দেওয়ার সান্ত্বনা আসলে কিছুতেই হয় না।

বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছিলাম। এত দিন প্রশ্নাতীতভাবে তা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কোনো খেলায় আর কোনো দল এই ‘চোকার্স’ অপবাদ এভাবে বয়ে বেড়ায়নি। এই বিশ্বকাপে একের পর এক ক্লোজ ম্যাচ জিতে, অষ্টমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল-জুজু জয় করে ফাইনালের আগেই যা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলেছে তাদের। বিশ্বকাপ জিতলে যা চিরতরে গা থেকে খসিয়ে দিত ওই দুঃসহ তকমাটা। যে অবস্থা থেকে ফাইনালটা হেরেছে, তাতে ফিসফাস করে ওই কথাটা আবারও উঠতেই পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে অবশ্যই উঠত না। উঠত না আরেকটি কারণেও। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন চোকার্স হিসেবে যে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর গত ১১ বছরে পাঁচটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে ভারত। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে এরই মধ্যে। সেই পাঁচ ফাইনালেই একটা জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে। সব কটিতেই হেরেছে ভারত। টানা ষষ্ঠ ফাইনালে হারলে তাদের চোকার্স বলায় কোনো অন্যায় হতো না।

আগের ৫টি ফাইনালে হারা অনেকেই আছেন ভারতের এই দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৫ ওভার বাকি থাকতে আবারও সেটিকেই অবধারিত পরিণতি বলে কি মনে হয়নি তাঁদের! ৩৬ বলে যখন ৫৪ রান লাগে, হাইনরিখ ক্লাসেন এই ফাইনালের ভাগ্য লিখে দিয়েছিলেন বলেই তো মনে হয়েছিল। অক্ষর প্যাটেলের ওই ওভার থেকে ২৪ রান। দুটি ওয়াইড বলে ২ রান। বাকি ২২ রানই ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। খুবই সহজ হয়ে যাওয়া সমীকরণ থেকে ম্যাচটা যে এমন রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির দিকে যাবে, এ বোধ হয় শুধু টি-টোয়েন্টিতেই সম্ভব। যেখানে একটা ওভারই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।

৩০ বলে ৩০ রান লাগে, হাতে ৬ উইকেট। ক্লাসেনের সঙ্গে ব্যাটিং করছেন ডেভিড মিলার। এত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন যে কোথাও না কোথাও দুজনই হয়তো এক ওভারে ৩০ রান নিয়ে থাকবেন। ২৭ বলে ৫২ রান করে ক্লাসেন আউট হয়ে যাওয়ার পরও তো ম্যাচে প্রবল ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। এতটাই যে ভারতীয় টিভি রিপোর্টাররা মন খারাপ করে লাইভের জন্য প্রেসবক্স থেকে নিচে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
সেখান থেকে ম্যাচটা কিনা শেষ বলের আগেই শেষ।

ম্যাচশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়া
ম্যাচশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়াএএফপি
শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার ১০ রান লাগে। নো আর ওয়াইড না হলে তো ম্যাচ তখনই শেষ। হার্দিক পান্ডিয়া কি আর নো আর ওয়াইডের কোনো ঝুঁকি নেন। কোনোমতে বৈধ একটা বল করলেই তো হয়। তা করতেই মাঠে ভারতীয়দের বাঁধভাঙা আনন্দ। শুধুই আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের নয়, ১১ বছরে বারবার ফাইনাল থেকে শূন্য হাতে ফেরার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আনন্দও মিশে থাকল সেই উদ্‌যাপনে।

মনে আছে তো কীভাবে শুরু হয়েছিল এই ফাইনাল! প্রথম ৮ বলে ২৩ রান। পরের ৪ বলে ২ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আর কোনো ফাইনাল প্রথম মিনিট দশেকে দুই দলকেই এমন সমানভাবে আনন্দ দিয়েছে বলে মনে হয় না। মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম বলে রোহিত শর্মা সিঙ্গেল নেওয়ার পর কোহলির পরপর দুই চার। শেষ বলে আরেকটি। ইয়ানসেনের প্রথম ওভার থেকে ১৫ রান।

গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের কথা মনে করিয়ে দেওয়াটা সেখানেই শেষ করেননি ইয়ানসেন। ইডেন গার্ডেনে এই ভারতের বিপক্ষেই প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ১৭ রান। ৯.৪ ওভারে মোট ৯৪। এখানে ৪ ওভারে ৪৯। কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি খারাপ—এই তর্ক হতেই পারে। ইয়ানসেন দুটিকেই হয়তো এক ব্র্যাকেটে রাখবেন। দুটিতেই যে হেরেছে তাঁর দল।

ফাইনালের প্রথমার্ধ বিরাট কোহলির। এই বিশ্বকাপে অবশেষে রান পেলেন। আগের ৭ ইনিংসে ৭৫ রানের অচেনা কোহলি এদিন এক ইনিংসেই ৭৬। কিন্তু টি-টোয়েন্টির নিষ্ঠুর পৃথিবীতে রান করেও শান্তি নেই। কোহলির এই ইনিংস ভারতের কাজে এল, নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার—এই প্রশ্ন কিন্তু উঠে যাচ্ছিল। ১৭তম ওভারে ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি, যাতে চার মাত্র ৪টা, সর্বশেষটি সেই চতুর্থ ওভারে। ইনিংসটা নিয়ে অস্বস্তির কারণেই হয়তো ফিফটি করে ব্যাট তোলেননি।

এরপরই একটু খোলস ছেড়ে বেরোলেন। পরের ৩ বলে ১২ রান, যাতে একটি ছয় ও একটি চার। হাফ সেঞ্চুরির পর ১১ নম্বরে আউট। আগের ১০ বলে ২৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা বসে থাকায় তারপরও প্রশ্নটা উঠছিল। আরেকটু আগেই কি কোহলির গা ঝাড়া দিয়ে ওঠা উচিত ছিল?

ভারত না জিতলে নির্ঘাত এ নিয়ে তুলকালাম হয়ে যেত। উল্টো বিরাট কোহলি এখন নায়ক। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে যিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের কথা জানিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপ জয়, নিজে ম্যাচসেরা—এমন সুন্দর বিদায় ক্রিকেট খুব বেশি দেখেনি।