সাতক্ষীরা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আটক সাবেক হেভিওয়েট মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আদালত চত্বরে জুতা-ডিম নিক্ষেপ ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন ৬ দিন ও জাসদের ইনুর ৭ দিন রিমান্ড মঞ্জুর আইসিটি’র ফেসবুক-ইউটিউব বন্ধ, পাসওয়ার্ড জানেন শুধু পলক আর.জি.কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড! বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ! বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠার দায়িত্ব নিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস বঙ্গভবনে নবীন-প্রবীণের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ একটু পরেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে ঢাকায় বাম দলসমূহের মিছিল ও সমাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রতিরোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সাতক্ষীরার বাম দলসমূহের যৌথ বিবৃতি

সাতক্ষীরার বিভিন্ন আ.লীগ নেতার বাড়ি-অফিস ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে আগুন, ভাঙচুর, লুটতরাজ

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:০৫:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪ ৫৫ বার পঠিত

সাতক্ষীরায় কারাগারে হামলা, পালিয়েছে ৫৮৮ বন্দী

৫টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নিহতের সংখ্যা ১৪

আজ সোমবার বিকেল থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একজন সংসদের বাড়ি, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করেছে। সহিংসতায় নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিকেল ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা কারাফটক ভেঙে সকল আসামীদের বের করে দিয়ে যায়। এ ছাড়া ধমীয় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাতের আঁধারে সহিংসতা আরো বাড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর দুটোর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারিরা শহরের খুলনা রোডের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের ফটক ভাঙচুরে করে। পরে তারা সদর থানার ফটক ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে হামলা চালায়। থানা ফটকের সামনে ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরপরই আন্দোলনকারিরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলাশপোলের বীর মুক্তিযোদ্ধা অথ্যক্ষ আবু আহম্মেদ এর বাড়ি, সুলতানপুরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ শুভ্র, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের সিটি কলেজের সামনের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের শ্রমিকলীগের অফিস, পাকাপুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুরাতন অফিস, বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলের বাড়ি, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা শাহাজাদার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তালা উপজেলার খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলুর বাড়ি, তালা যুবলীগের সভাপতি মীর জাকির হোসেনের অফিস, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কালিগঞ্জের নারায়নপুরে আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদের নিয়ন্ত্রণাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আশাশুনির প্রতাপনগরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ি, মানিকখালি ব্রীজের টোল আদায়ের ঘর, শ্যামনগরের রমজাননগরের ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বরেন্দ্র বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নূরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে।

ভাঙচুর করা হয় পুরাতন সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ অফিস, পোষ্ট অফিস মোড়ের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জজ কোর্টের পাশে অ্যাড. তামিম আহম্মেদ সোহাগের বাড়ি, কাটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সদস্য সচীব হাসান ইমাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ি, আবাদেরহাটের বুলবুলের ফলের দোকান, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের আবাদেরহাটের অফিস, আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইন্দিরা গ্রামের হাবিবুর রহমান হবির বাড়ি, কুচপুকুরের নজরুলের বাড়ি, ঝাউডাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী বিশ্বাসের বাড়ি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সনৎ ঘোষের বাড়ি, আশাশুনির বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ সানার বাড়ি, আশাশুনি সদরের রণজিৎ কুমার বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শ্যামনগরের ভেটখালি বাজারের কৃষ্ণপদ রায় এর চায়ের দোকান, তার ছেলে মিলন রায় এর মোটর সাইকেল, আল ফারুক ও তার ছেলে লিঙ্কন এর মাইক্রোবাস ও মটর সাইকেল, কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনিছুজ্জামান খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি পাটকেলঘাটা বাজারের সার, কীটনাশ ও বীজ ব্যবসায়ি বিশ্বজিৎ সাধু, রুপায়ন হাজরার মোবাইল দোকান, সাতক্ষীরা- ১ তালা- কলারোয়া আসানের সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

সোমবার রাত ৮টার দিকে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপির সাবেক চেয়াম্যান নাকনা গ্রামের জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা করা হলে তিনি ছাঁদ থেকে গুলি ছুঁড়লে আন্দোলনকারিরা কুড়িকাহনিয়া গ্রামের হারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেস আনাস বিল্লাহ, কল্যানপুর গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে আদম আলী ও কোলা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলম নিহত হন। গুলি শেষ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে জাকির হোসেন ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুপিয়ে, জাকির হোসেনের এক ভাইপো, এক ভাগ্নে ছাড়াও তার দাই দেহরক্ষীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

বিকেল ৬টার দিকে জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ও সেলের তালা ভেঙে আসামীদের বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর থানার সামনে পুলিশ ও ক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। শোনা যাচ্ছিল গুলির শব্দ।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর, কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিষ্ণুপদ পাল, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান ছিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবার রাত ১০টার পর থেকে পরবর্তী ২০ ঘণ্টায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ, দুইজন ইউপি চেয়ারম্যান, দুটি পত্রিকা অফিস, কমপক্ষে ৫টি থানা, একজন চিকিৎসকের বাড়ি, আওয়ামীলীগ সভাপতিসহ কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলায় পাঁচজন নিহত ও কমপক্ষে ১০জন জখম হয়েছেন। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৫০), মৃগিডাঙা গ্রামের সাবেক সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন(২৭), একই গ্রামের তেজামউদ্দিনের চেলে মুকুল হোসেন (৩৪), আব্দুল গফুরের চেলে ফারুক হোসেন সান্টু (৪০), ঘোনা গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৯)।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের বাড়িতে সোমবার রাত ১০টার পর থেকে নতুন করে হামলা চালায় আন্দোলনকারিরা। তারা সংরক্ষিত নারী সাংসদ লায়লা পারভিন সেঁজুতির বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে একটি মোটর সাইকেলসহ দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা অফিসে আগুণ লাগিয়ে দেয়। পরে তার ব্যবহৃত নতুন নোহা গাড়িটি বাইপাস সড়কে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। প্রায় একই সময় আন্দোলনকারীরা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় দৈনিক কালের চিত্র অফিসে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে। তবে খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেড এলেও তাদেরকে আগুন নিভাতে দেওয়া হয়নি। রসুলপুরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আজিজুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও লুট্পাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় শহরের আলবারাকা মার্কেটে।
একইভাবে ধুলিহর বাজারে ডাঃ দীনেশ দত্তের ফার্মেষী ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। থানা থেকে পুলিশ চলে যাওয়ার সূযোগে মামলা থাকার পরও প্রতিপক্ষ কালিপদ দাসের ছেলে সরোজিৎ কুমার দাস ও রণজিৎ কুমার দাস ৩০/৪০ জন ভাড়াটিয় সন্ত্রাসী নিয়ে সোমাবর সকাল ৬টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দেবনগরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নিরঞ্জন দাসের বাড়ির প্রাচীর ভেঙে, ১১টি আমগাছ, মেগহনি গাছ, নারিকেল গাছ কেটে জোর করে ইট দিয়ে বাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা বানিয়েছে। বাধা দেওয়ায় নিরঞ্জন দাস ও তার স্ত্রীকে মারপিট করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সদর থানায় আন্দোলনকারিরা দফায় দফায় হামলা চালায়। করা হয় অগ্নিসংযোগ। এ সময় পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এরপরও হামলাকারিরা থানায় থাকা কমপক্ষে ৭০ টি মটর সাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। থানার ভবন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তদন্ত ওসির কক্ষ, উপপরিদর্শকদের বসার কক্ষ ডিউটি অফিসারের কক্ষ, ব্রাকসহ কমপক্ষে সাতটি কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এরপর একটি কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইভাবে শ্যামনগর থানায়ও ভাঙচুর, লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তালা থানার মধ্যে দুটি মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও দুটি মটর সাইকেল লুট করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় কলারোয়া ও আশাশুনি থানায়। এ ছাড়া দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও পাটকেলঘাটায় হামলার আতঙ্কে পুলিশ কর্মকর্তারা থানা ছেড়ে চলে যায়। নামমাত্র দুই তিনজন সিপাহী ওইসব তিন থানার ভিতরে তালা মেরে অবস্থান করছেন।
এদিকে সোমবার গভীর রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় পুড়ে জখম হয় তার প্রতিবন্ধী বোন রমা মুখার্জী। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ওই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজা’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রতনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের বাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়।
লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয় রতনপুর বাজারের জুয়েলারী ব্যবসায়ি খোকন দত্তের দোকান। একই উপজেলার শ্রীধরকাটি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সিদ্দীকুর রহমানের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। রাত সোয়া ১১টার দিকে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি, বিষ্ণপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক সনৎ গাইনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় ভাাড়সিমলা ইউপি সদস্য বরুন কুমার ঘোষের চাউলের গুদাম “মা লক্ষী ভাণ্ডার” এ লুট করা হয়। ভাংচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয় শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম মৃধা, বুড়িগোয়ালিনীর ডালিম ঘরামী, ভবতোষ মন্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান অসীম কুমার জোয়ারদার, কদমতলার সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, মলয় রপ্তান, উৎপল জোয়ারদার, হরিনগর বাজারের অসীম মণ্ডলের কসমেটিকস দোকান, নিরঞ্জন মণ্ডলের ম্যাকানিকের দোকান, মোস্তফার চায়ের দোকান, কলবাড়ি বাজারের কার্তিক মণ্ডল ও বলাই মণ্ডলের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সদর ইউনিয়নের চিংড়িখালি গ্রামের দেবদাস এর বাড়ি থেকে টাকা, সোনার গহনা ও মটর সাইকেল লুটপাট করা হয়। চিংড়িখালি দুর্গা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রামপদ মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে উঠানে আগুন জ্বালানো হয়। ফুলবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রামপদ এর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তিলকুড়া গ্রামের ফারুক হোসেন রতনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ওরফে সাহেব আলীর অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিক মাহামুদুল হাসান শাওনের সখীপুরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টোর দিকে শ্যামনগরের রমজাননগর গ্রামের হরিপদ বর্মন ও তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুন বর্মনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট শেষে তাদেরকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত ১০টায় সদর উপজেলার মৃগীডাঙা গ্রামের জাহিদ, মুকুল, ফারুক ও ঘোনা গ্রামের সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মুকুলের বাড়ি গোলা থেকে থান ও চাল লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় মারাত্মক জখম হয় মৃগীডাঙা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ও মোস্তফা কামাল। তালা উপজেলার কুমিরায় কমপক্ষে ২০টি হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করা হয়।
এছাড়া বাড়ি ভাংচুর না করার শর্তে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া শেখেরহাট, মাগুরা বাজার, খেজুরবুনিয়া ও খলিলনগর বাজারসহ কয়েকটি বাজারের ১০ জনেরও বেশি হিন্দু ব্যবসায়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়।
সোমবার রাতে তালা উপজেলার মাগুরা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ আটঘরা গ্রামের রামপ্রসাদ দাস, জালালপুর ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক রায়, শ্রীমন্তকাটি গ্রামের মিন্টু ও সন্টু দাসের কাপড়ের দোকান, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি মেহেদী হাসানের রড সিমেন্টের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জালালপুর বাজারের ফার্মেসি মালিক জেলা পরিষদ সদস্য ইন্দ্রজিৎ দাসের পানের বরজ তার কেটে ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় জেলখানা থেকে চলে যাওয়ার সময় আসামী ও কারা কর্তৃপক্ষের সাথে হাতাহাতিতে কমপক্ষে ৫৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলর হাসনা জাহান বিথীসহ ২১ জন কারারক্ষী ও কর্মকর্তা। এসময় আন্দোলনকারীরা শতাধিক কারারক্ষীর রেশন, পিসি কার্ডের টাকা ও ক্যান্টিনের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লুটপাট করে। তবে চলে যাওয়া ৫৯৬ জন আসামীর মধ্যে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামী কলারোয়ার সোহাগ, রকিব, নাশকতা মামলার আসামী সদরের মৃগিডাঙার ইসমাইল হোসেনসহ দুই শতাধিক আসামী মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে আবার কারাগারে ফিরে এসেছে।
সোমবার রাতে সাতক্ষীরা কারাফটকের পাশে সুমাইয়া স্টোর্স ও আওয়াল স্টোর্স ভাঙচুর করে আন্দোলনকারিরা তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে। তবে শহরের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যানবাহন চলছে কম।
মঙ্গলবার রাতেও অনেকেই সহিংসতার আশংকা করছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে আদালতে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে প্রতিপক্ষের দারা লাঞ্ছিত হয়েছেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মিজানুর রহমান। তবে অনেকেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আদালতে যাননি।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আলীপুরের বাঁকাল এলাকার কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালায় রউফ বাহিনীর সদস্যরা। ঝাউডাঙার সাংবাদিক দৈনিক পত্রদূতের মনিরুল ইসলাম মনিকে জনৈক হাসান মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে ছুরি নিয়ে দুইবার জীবননাশের হুমকি দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান হোসেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার পূর্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী জেলায় সংখ্যালঘু সহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার সাথে সাধারন ছাত্র আন্দোলনকারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত: শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী সহিংসতার সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত আশাশুনির প্রতাপনগরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন , ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকিরের ভাইপো সজীব, ভাগ্নে আশিক, গাড়ি চালক শাহীনুর রহমান, দেহরক্ষী শাকের আহম্মেদ, হাফেজ আনাস, আলম, আদম আলী নিহত হন। ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল সহ কমপক্ষে ৩০টি স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো-১৪।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাতক্ষীরার বিভিন্ন আ.লীগ নেতার বাড়ি-অফিস ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে আগুন, ভাঙচুর, লুটতরাজ

আপডেট সময় : ১১:০৫:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪

সাতক্ষীরায় কারাগারে হামলা, পালিয়েছে ৫৮৮ বন্দী

৫টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নিহতের সংখ্যা ১৪

আজ সোমবার বিকেল থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একজন সংসদের বাড়ি, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করেছে। সহিংসতায় নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিকেল ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা কারাফটক ভেঙে সকল আসামীদের বের করে দিয়ে যায়। এ ছাড়া ধমীয় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাতের আঁধারে সহিংসতা আরো বাড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোমবার দুপুর দুটোর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারিরা শহরের খুলনা রোডের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের ফটক ভাঙচুরে করে। পরে তারা সদর থানার ফটক ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে হামলা চালায়। থানা ফটকের সামনে ও ট্রাফিক পুলিশ অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরপরই আন্দোলনকারিরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলাশপোলের বীর মুক্তিযোদ্ধা অথ্যক্ষ আবু আহম্মেদ এর বাড়ি, সুলতানপুরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ শুভ্র, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের সিটি কলেজের সামনের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের শ্রমিকলীগের অফিস, পাকাপুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পুরাতন অফিস, বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলের বাড়ি, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা শাহাজাদার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তালা উপজেলার খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলুর বাড়ি, তালা যুবলীগের সভাপতি মীর জাকির হোসেনের অফিস, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কালিগঞ্জের নারায়নপুরে আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদের নিয়ন্ত্রণাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আশাশুনির প্রতাপনগরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ি, মানিকখালি ব্রীজের টোল আদায়ের ঘর, শ্যামনগরের রমজাননগরের ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বরেন্দ্র বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নূরনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে।

ভাঙচুর করা হয় পুরাতন সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ অফিস, পোষ্ট অফিস মোড়ের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জজ কোর্টের পাশে অ্যাড. তামিম আহম্মেদ সোহাগের বাড়ি, কাটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সদস্য সচীব হাসান ইমাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ি, আবাদেরহাটের বুলবুলের ফলের দোকান, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের আবাদেরহাটের অফিস, আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইন্দিরা গ্রামের হাবিবুর রহমান হবির বাড়ি, কুচপুকুরের নজরুলের বাড়ি, ঝাউডাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী বিশ্বাসের বাড়ি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সনৎ ঘোষের বাড়ি, আশাশুনির বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ সানার বাড়ি, আশাশুনি সদরের রণজিৎ কুমার বৈদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শ্যামনগরের ভেটখালি বাজারের কৃষ্ণপদ রায় এর চায়ের দোকান, তার ছেলে মিলন রায় এর মোটর সাইকেল, আল ফারুক ও তার ছেলে লিঙ্কন এর মাইক্রোবাস ও মটর সাইকেল, কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনিছুজ্জামান খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি পাটকেলঘাটা বাজারের সার, কীটনাশ ও বীজ ব্যবসায়ি বিশ্বজিৎ সাধু, রুপায়ন হাজরার মোবাইল দোকান, সাতক্ষীরা- ১ তালা- কলারোয়া আসানের সাংসদ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

সোমবার রাত ৮টার দিকে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপির সাবেক চেয়াম্যান নাকনা গ্রামের জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা করা হলে তিনি ছাঁদ থেকে গুলি ছুঁড়লে আন্দোলনকারিরা কুড়িকাহনিয়া গ্রামের হারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেস আনাস বিল্লাহ, কল্যানপুর গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে আদম আলী ও কোলা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলম নিহত হন। গুলি শেষ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে জাকির হোসেন ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুপিয়ে, জাকির হোসেনের এক ভাইপো, এক ভাগ্নে ছাড়াও তার দাই দেহরক্ষীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

বিকেল ৬টার দিকে জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ও সেলের তালা ভেঙে আসামীদের বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর থানার সামনে পুলিশ ও ক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। শোনা যাচ্ছিল গুলির শব্দ।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর, কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিষ্ণুপদ পাল, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান ছিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবার রাত ১০টার পর থেকে পরবর্তী ২০ ঘণ্টায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ, দুইজন ইউপি চেয়ারম্যান, দুটি পত্রিকা অফিস, কমপক্ষে ৫টি থানা, একজন চিকিৎসকের বাড়ি, আওয়ামীলীগ সভাপতিসহ কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলায় পাঁচজন নিহত ও কমপক্ষে ১০জন জখম হয়েছেন। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৫০), মৃগিডাঙা গ্রামের সাবেক সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন(২৭), একই গ্রামের তেজামউদ্দিনের চেলে মুকুল হোসেন (৩৪), আব্দুল গফুরের চেলে ফারুক হোসেন সান্টু (৪০), ঘোনা গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৯)।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের বাড়িতে সোমবার রাত ১০টার পর থেকে নতুন করে হামলা চালায় আন্দোলনকারিরা। তারা সংরক্ষিত নারী সাংসদ লায়লা পারভিন সেঁজুতির বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে একটি মোটর সাইকেলসহ দৈনিক পত্রদূত পত্রিকা অফিসে আগুণ লাগিয়ে দেয়। পরে তার ব্যবহৃত নতুন নোহা গাড়িটি বাইপাস সড়কে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়। প্রায় একই সময় আন্দোলনকারীরা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় দৈনিক কালের চিত্র অফিসে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে। তবে খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেড এলেও তাদেরকে আগুন নিভাতে দেওয়া হয়নি। রসুলপুরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আজিজুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও লুট্পাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় শহরের আলবারাকা মার্কেটে।
একইভাবে ধুলিহর বাজারে ডাঃ দীনেশ দত্তের ফার্মেষী ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। থানা থেকে পুলিশ চলে যাওয়ার সূযোগে মামলা থাকার পরও প্রতিপক্ষ কালিপদ দাসের ছেলে সরোজিৎ কুমার দাস ও রণজিৎ কুমার দাস ৩০/৪০ জন ভাড়াটিয় সন্ত্রাসী নিয়ে সোমাবর সকাল ৬টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দেবনগরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নিরঞ্জন দাসের বাড়ির প্রাচীর ভেঙে, ১১টি আমগাছ, মেগহনি গাছ, নারিকেল গাছ কেটে জোর করে ইট দিয়ে বাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা বানিয়েছে। বাধা দেওয়ায় নিরঞ্জন দাস ও তার স্ত্রীকে মারপিট করা হয়েছে।
সোমবার রাতে সদর থানায় আন্দোলনকারিরা দফায় দফায় হামলা চালায়। করা হয় অগ্নিসংযোগ। এ সময় পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এরপরও হামলাকারিরা থানায় থাকা কমপক্ষে ৭০ টি মটর সাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। থানার ভবন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তদন্ত ওসির কক্ষ, উপপরিদর্শকদের বসার কক্ষ ডিউটি অফিসারের কক্ষ, ব্রাকসহ কমপক্ষে সাতটি কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এরপর একটি কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইভাবে শ্যামনগর থানায়ও ভাঙচুর, লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তালা থানার মধ্যে দুটি মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও দুটি মটর সাইকেল লুট করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় কলারোয়া ও আশাশুনি থানায়। এ ছাড়া দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও পাটকেলঘাটায় হামলার আতঙ্কে পুলিশ কর্মকর্তারা থানা ছেড়ে চলে যায়। নামমাত্র দুই তিনজন সিপাহী ওইসব তিন থানার ভিতরে তালা মেরে অবস্থান করছেন।
এদিকে সোমবার গভীর রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় পুড়ে জখম হয় তার প্রতিবন্ধী বোন রমা মুখার্জী। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ওই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজা’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রতনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের বাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়।
লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয় রতনপুর বাজারের জুয়েলারী ব্যবসায়ি খোকন দত্তের দোকান। একই উপজেলার শ্রীধরকাটি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সিদ্দীকুর রহমানের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। রাত সোয়া ১১টার দিকে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি, বিষ্ণপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক সনৎ গাইনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় ভাাড়সিমলা ইউপি সদস্য বরুন কুমার ঘোষের চাউলের গুদাম “মা লক্ষী ভাণ্ডার” এ লুট করা হয়। ভাংচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয় শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম মৃধা, বুড়িগোয়ালিনীর ডালিম ঘরামী, ভবতোষ মন্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান অসীম কুমার জোয়ারদার, কদমতলার সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, মলয় রপ্তান, উৎপল জোয়ারদার, হরিনগর বাজারের অসীম মণ্ডলের কসমেটিকস দোকান, নিরঞ্জন মণ্ডলের ম্যাকানিকের দোকান, মোস্তফার চায়ের দোকান, কলবাড়ি বাজারের কার্তিক মণ্ডল ও বলাই মণ্ডলের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সদর ইউনিয়নের চিংড়িখালি গ্রামের দেবদাস এর বাড়ি থেকে টাকা, সোনার গহনা ও মটর সাইকেল লুটপাট করা হয়। চিংড়িখালি দুর্গা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রামপদ মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে উঠানে আগুন জ্বালানো হয়। ফুলবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রামপদ এর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তিলকুড়া গ্রামের ফারুক হোসেন রতনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ওরফে সাহেব আলীর অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিক মাহামুদুল হাসান শাওনের সখীপুরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টোর দিকে শ্যামনগরের রমজাননগর গ্রামের হরিপদ বর্মন ও তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুন বর্মনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট শেষে তাদেরকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত ১০টায় সদর উপজেলার মৃগীডাঙা গ্রামের জাহিদ, মুকুল, ফারুক ও ঘোনা গ্রামের সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মুকুলের বাড়ি গোলা থেকে থান ও চাল লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় মারাত্মক জখম হয় মৃগীডাঙা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ও মোস্তফা কামাল। তালা উপজেলার কুমিরায় কমপক্ষে ২০টি হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করা হয়।
এছাড়া বাড়ি ভাংচুর না করার শর্তে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া শেখেরহাট, মাগুরা বাজার, খেজুরবুনিয়া ও খলিলনগর বাজারসহ কয়েকটি বাজারের ১০ জনেরও বেশি হিন্দু ব্যবসায়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়।
সোমবার রাতে তালা উপজেলার মাগুরা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ আটঘরা গ্রামের রামপ্রসাদ দাস, জালালপুর ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক রায়, শ্রীমন্তকাটি গ্রামের মিন্টু ও সন্টু দাসের কাপড়ের দোকান, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি মেহেদী হাসানের রড সিমেন্টের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জালালপুর বাজারের ফার্মেসি মালিক জেলা পরিষদ সদস্য ইন্দ্রজিৎ দাসের পানের বরজ তার কেটে ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় জেলখানা থেকে চলে যাওয়ার সময় আসামী ও কারা কর্তৃপক্ষের সাথে হাতাহাতিতে কমপক্ষে ৫৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলর হাসনা জাহান বিথীসহ ২১ জন কারারক্ষী ও কর্মকর্তা। এসময় আন্দোলনকারীরা শতাধিক কারারক্ষীর রেশন, পিসি কার্ডের টাকা ও ক্যান্টিনের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লুটপাট করে। তবে চলে যাওয়া ৫৯৬ জন আসামীর মধ্যে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামী কলারোয়ার সোহাগ, রকিব, নাশকতা মামলার আসামী সদরের মৃগিডাঙার ইসমাইল হোসেনসহ দুই শতাধিক আসামী মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে আবার কারাগারে ফিরে এসেছে।
সোমবার রাতে সাতক্ষীরা কারাফটকের পাশে সুমাইয়া স্টোর্স ও আওয়াল স্টোর্স ভাঙচুর করে আন্দোলনকারিরা তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে। তবে শহরের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যানবাহন চলছে কম।
মঙ্গলবার রাতেও অনেকেই সহিংসতার আশংকা করছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে আদালতে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে প্রতিপক্ষের দারা লাঞ্ছিত হয়েছেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মিজানুর রহমান। তবে অনেকেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আদালতে যাননি।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আলীপুরের বাঁকাল এলাকার কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালায় রউফ বাহিনীর সদস্যরা। ঝাউডাঙার সাংবাদিক দৈনিক পত্রদূতের মনিরুল ইসলাম মনিকে জনৈক হাসান মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে ছুরি নিয়ে দুইবার জীবননাশের হুমকি দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান হোসেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার পূর্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী জেলায় সংখ্যালঘু সহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার সাথে সাধারন ছাত্র আন্দোলনকারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত: শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী সহিংসতার সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত আশাশুনির প্রতাপনগরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন , ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকিরের ভাইপো সজীব, ভাগ্নে আশিক, গাড়ি চালক শাহীনুর রহমান, দেহরক্ষী শাকের আহম্মেদ, হাফেজ আনাস, আলম, আদম আলী নিহত হন। ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল সহ কমপক্ষে ৩০টি স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো-১৪।