সাতক্ষীরা ০২:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুরে আসুন ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

পিসিবার্তা ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ১৩৮ বার পঠিত

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা বৈদ্যনাথ ধাম হল হিন্দু দেবতা শিবের ১২টি পবিত্রতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম। এই মন্দিরটি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর জেলার দেওঘর শহরে অবস্থিত। বৈদ্যনাথ মন্দির চত্বরে মূল বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির ছাড়াও আরো ২১টি মন্দির আছে।

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, রাবণ হলো শিবের পরম ভক্তের মধ্যে একজন তাই রাবনের অনুরোধে শিবের কৃপায় কৈলাশ পর্বত থেকে রাবণ শিবকে নিয়ে যাচ্ছিল লিঙ্গ রুপে। কিন্তু শিব পুত্র গণেশের ছলনা তে রাবণ শিবলিঙ্গ নিয়ে যেতে পারেনি লঙ্কায় সেই শিবলিঙ্গ বৈদ্যনাথ নামে আর্বিভাব হয়।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ

শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎসটি খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ ক্করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখণ্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না।

প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ। প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।

বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল- ১) গুজরাতের সোমনাথ, ২) অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, ৩) মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, ৪) মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, ৫) হিমালয়ের কেদারনাথ, ৬) মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, ৭) উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, ৮) মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ৯) ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, ১০) গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, ১১) তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং ১২) মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর।

শক্তিপীঠ, দেওঘর

পবিত্র হিন্দু শাস্ত্রীয় গ্রন্থে বর্ণিত আছে- দক্ষযজ্ঞে সতী দূর্গা দেহত্যাগ করলে মহাদেব সতীর দেহকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করে কাঁধে তুলে প্রলয়নৃত্য শুরু করেন। ধরিত্রীকে সেই মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা করেত ভগবান বিষ্ণু প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। এই সব কটি জায়গাকে সতীপীঠ বলা হয়। সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাগুলি প্রত্যেক হিন্দুর কাছে পরম পবিত্রের জায়গা। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা জুড়ে রয়েছে এই ৫১ পীঠ। বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষ,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় এই ৫১টি পীঠ অবস্থিত। এই বৈদ্যনাথ ধমেই সতীর হূদপিণ্ড পতিত হয়। সেখানেই গড়ে ওঠে শক্তিপীঠ, দেওঘর, ঝাড়খণ্ড।

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির দর্শন

ট্রেনযাত্রাঃ হাওড়া থেকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লীগামী যে সব ট্রেন জসিড়ি স্টেশনে থামে, তাতে চাপলেই সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌছে যাওয়া যায় জসিড়ি হয়ে দেওঘর। ১২৩০৩- প্রোভা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সকাল ০৮:০০), ১২৩২৭- উপাসনা এক্সপ্রেস (ছাড়ে দুপুর ০১:০০), ১২০২৩- জনশতাব্দী এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ০২:০৫), ১২৩৩৩- বিভূতি এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ০৮:০০), ১২৩৩১- হিমগিরী এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ১১:৫৫)। সব ট্রেন কোলকাতা (হাওড়াবা শিয়ালদহ) থেকে প্রতিদিন যাত্রা করে না।  কোন ট্রেন কোন কোন দিন ছাড়ে আগেই জেনে টিকিট নিতে হবে। চার ঘণ্টার যাত্রায় স্লিপারের ভাড়া গড়ে ২৫০ টাকা।

বৈদ্যনাথধামে মহা শিবরাত্রি উৎসব

বলা হচ্ছে, শিবের মতো স্বামী পেতে মহিলাদের শিবরাত্রির ব্রত এখন ব্যাকডেটেড। বরং পুরুষরাই এখন পার্বতীর মতো স্ত্রী পেতে শুরু করেছেন কৃচ্ছ্রসাধন। সুন্দরী এবং পতিব্রতা স্ত্রীর স্বপ্ন সব পুরুষই দেখেন। আর তিনি যদি পার্বতীর মতো হন, তাহলে তো কথাই নেই!

তাই দেওঘরের বৈদ্যনাথধামে মহা শিবরাত্রিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। শিবরাত্রির দিন এই বৈদ্যনাথধামে মহাসমারোহে শিব-পার্বতীর বিয়ে হয়। শিবরাত্রির কয়েক দিন আগে পার্শ্ববর্তী রোহিণী গ্রামে তৈরি হয় হাজার হাজার টোপর। লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের, নানা আকারের টোপর। শুধু উপবাস করে শিবের মাথায় দুধ ঢাললেই হবে না। মনের কামনা নিয়ে যেসব পুরুষরা দেওঘরে আসেন, তাঁদের এই টোপরটি চড়াতে হয় বাবা বৈদ্যনাথের মাথায়।

সৎসঙ্গ আশ্রম, দেওঘর

এই দেওঘরেই বৈদ্যনাথ ধাম থেকে কয়েক কিমি দূরে রয়েছে ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্ঘ আশ্রম। সৎসঙ্গ আশ্রম হল ভারতে এবং সারা বিশ্বে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দ্বারা শুরু হওয়া সৎসঙ্গ আন্দোলনের সদর দফতর। দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রম সমাজের সব ধরনের মানুষের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। আশ্রমের আশেপাশের জনপদটি সৎসঙ্গ নগর নামে পরিচিত এবং সেখানে ভক্তদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য একটি নিবেদিত ভারতীয় রেলওয়ে যাত্রী স্টপ রয়েছে।

আশ্রম প্রতিষ্ঠা

১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) পাবনা জেলায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাঁর জন্মস্থান থেকে দেওঘরে চলে আসার পর দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ভারতের স্বাধীনতা ও দেশভাগের পর সৎসঙ্গ একটি সংগঠন হিসেবে নিবন্ধিত হয়, ১৮৬০ সালের সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে।

প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র

সৎসঙ্গ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভক্ত ও সাধারণ মানুষের সেবার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা বিভিন্ন জনহিতকর ও সামাজিক কাজ পরিচালিত হয়।

সৎসঙ্গ পরোপকার, দূতদীপ্তি সৎসঙ্গ দাতব্য হাসপাতাল, আনন্দবাজার ভবন, সৎসঙ্গ আশ্রম আনন্দবাজার (কমিউনিটি কিচেন), সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস, সৎসঙ্গ রাসায়নিক মন্দির (সৎসঙ্গ রাসায়নিক কাজ), স্কুল এবং কলেজ এবং জাদুঘর। এছাড়াও বৃষ্টির জল সংগ্রহের ব্যবস্থা, সৎসঙ্গ আশ্রমের বেদ ভবন, বেদ অধ্যয়ন ও আবৃত্তির জন্য নিবেদিত বেদ ভবন, সৎসঙ্গ গ্রন্থাগার, কৃষ্টিবান্দাব নাট্যশিল্পম (সঙ্গীত ও নাটকীয় প্রতিষ্ঠান), সৎসঙ্গ প্রেস, সৎসঙ্গ কার্পেনট্রি, প্রকৌশল ও যান্ত্রিক কর্মশালা, সৎসঙ্গ গ্যারেজ, গোশালা (গোশাল) এর মতো অন্যান্য কেন্দ্র ও সুবিধা রয়েছে।

সৎসঙ্ঘের উৎসব ও পার্বণ

সারা বছর ধরে সৎসঙ্গ আশ্রমে বেশ কিছু অনুষ্ঠান পালিত হয়। সৎসঙ্গ আশ্রমে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, তাঁর স্ত্রী (শ্রীশ্রী বোরোমা), তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র (শ্রীশ্রী বোর্দা) এবং বর্তমান আচার্যদেবের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনের ঘটনা সম্পর্কিত অন্যান্য উৎসব, ঋত্বিক সম্মেলনও পালিত হচ্ছে। দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত আশ্রমে উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সাধারণত সৎসঙ্গ আশ্রমে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঘুরে আসুন ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা বৈদ্যনাথ ধাম হল হিন্দু দেবতা শিবের ১২টি পবিত্রতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম। এই মন্দিরটি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর জেলার দেওঘর শহরে অবস্থিত। বৈদ্যনাথ মন্দির চত্বরে মূল বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির ছাড়াও আরো ২১টি মন্দির আছে।

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, রাবণ হলো শিবের পরম ভক্তের মধ্যে একজন তাই রাবনের অনুরোধে শিবের কৃপায় কৈলাশ পর্বত থেকে রাবণ শিবকে নিয়ে যাচ্ছিল লিঙ্গ রুপে। কিন্তু শিব পুত্র গণেশের ছলনা তে রাবণ শিবলিঙ্গ নিয়ে যেতে পারেনি লঙ্কায় সেই শিবলিঙ্গ বৈদ্যনাথ নামে আর্বিভাব হয়।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ

শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎসটি খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ ক্করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখণ্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না।

প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ। প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।

বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল- ১) গুজরাতের সোমনাথ, ২) অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, ৩) মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর, ৪) মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, ৫) হিমালয়ের কেদারনাথ, ৬) মহারাষ্ট্রের ভীমশংকর, ৭) উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বিশ্বনাথ, ৮) মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর, ৯) ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, ১০) গুজরাতের দ্বারকায় নাগেশ্বর, ১১) তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের রামেশ্বর এবং ১২) মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের ঘৃষ্ণেরশ্বর।

শক্তিপীঠ, দেওঘর

পবিত্র হিন্দু শাস্ত্রীয় গ্রন্থে বর্ণিত আছে- দক্ষযজ্ঞে সতী দূর্গা দেহত্যাগ করলে মহাদেব সতীর দেহকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করে কাঁধে তুলে প্রলয়নৃত্য শুরু করেন। ধরিত্রীকে সেই মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা করেত ভগবান বিষ্ণু প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। এই সব কটি জায়গাকে সতীপীঠ বলা হয়। সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাগুলি প্রত্যেক হিন্দুর কাছে পরম পবিত্রের জায়গা। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা জুড়ে রয়েছে এই ৫১ পীঠ। বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষ,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় এই ৫১টি পীঠ অবস্থিত। এই বৈদ্যনাথ ধমেই সতীর হূদপিণ্ড পতিত হয়। সেখানেই গড়ে ওঠে শক্তিপীঠ, দেওঘর, ঝাড়খণ্ড।

বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির দর্শন

ট্রেনযাত্রাঃ হাওড়া থেকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লীগামী যে সব ট্রেন জসিড়ি স্টেশনে থামে, তাতে চাপলেই সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌছে যাওয়া যায় জসিড়ি হয়ে দেওঘর। ১২৩০৩- প্রোভা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সকাল ০৮:০০), ১২৩২৭- উপাসনা এক্সপ্রেস (ছাড়ে দুপুর ০১:০০), ১২০২৩- জনশতাব্দী এক্সপ্রেস (ছাড়ে বিকাল ০২:০৫), ১২৩৩৩- বিভূতি এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ০৮:০০), ১২৩৩১- হিমগিরী এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ১১:৫৫)। সব ট্রেন কোলকাতা (হাওড়াবা শিয়ালদহ) থেকে প্রতিদিন যাত্রা করে না।  কোন ট্রেন কোন কোন দিন ছাড়ে আগেই জেনে টিকিট নিতে হবে। চার ঘণ্টার যাত্রায় স্লিপারের ভাড়া গড়ে ২৫০ টাকা।

বৈদ্যনাথধামে মহা শিবরাত্রি উৎসব

বলা হচ্ছে, শিবের মতো স্বামী পেতে মহিলাদের শিবরাত্রির ব্রত এখন ব্যাকডেটেড। বরং পুরুষরাই এখন পার্বতীর মতো স্ত্রী পেতে শুরু করেছেন কৃচ্ছ্রসাধন। সুন্দরী এবং পতিব্রতা স্ত্রীর স্বপ্ন সব পুরুষই দেখেন। আর তিনি যদি পার্বতীর মতো হন, তাহলে তো কথাই নেই!

তাই দেওঘরের বৈদ্যনাথধামে মহা শিবরাত্রিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। শিবরাত্রির দিন এই বৈদ্যনাথধামে মহাসমারোহে শিব-পার্বতীর বিয়ে হয়। শিবরাত্রির কয়েক দিন আগে পার্শ্ববর্তী রোহিণী গ্রামে তৈরি হয় হাজার হাজার টোপর। লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের, নানা আকারের টোপর। শুধু উপবাস করে শিবের মাথায় দুধ ঢাললেই হবে না। মনের কামনা নিয়ে যেসব পুরুষরা দেওঘরে আসেন, তাঁদের এই টোপরটি চড়াতে হয় বাবা বৈদ্যনাথের মাথায়।

সৎসঙ্গ আশ্রম, দেওঘর

এই দেওঘরেই বৈদ্যনাথ ধাম থেকে কয়েক কিমি দূরে রয়েছে ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্ঘ আশ্রম। সৎসঙ্গ আশ্রম হল ভারতে এবং সারা বিশ্বে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দ্বারা শুরু হওয়া সৎসঙ্গ আন্দোলনের সদর দফতর। দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রম সমাজের সব ধরনের মানুষের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। আশ্রমের আশেপাশের জনপদটি সৎসঙ্গ নগর নামে পরিচিত এবং সেখানে ভক্তদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য একটি নিবেদিত ভারতীয় রেলওয়ে যাত্রী স্টপ রয়েছে।

আশ্রম প্রতিষ্ঠা

১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) পাবনা জেলায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাঁর জন্মস্থান থেকে দেওঘরে চলে আসার পর দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ভারতের স্বাধীনতা ও দেশভাগের পর সৎসঙ্গ একটি সংগঠন হিসেবে নিবন্ধিত হয়, ১৮৬০ সালের সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে।

প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র

সৎসঙ্গ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভক্ত ও সাধারণ মানুষের সেবার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা বিভিন্ন জনহিতকর ও সামাজিক কাজ পরিচালিত হয়।

সৎসঙ্গ পরোপকার, দূতদীপ্তি সৎসঙ্গ দাতব্য হাসপাতাল, আনন্দবাজার ভবন, সৎসঙ্গ আশ্রম আনন্দবাজার (কমিউনিটি কিচেন), সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস, সৎসঙ্গ রাসায়নিক মন্দির (সৎসঙ্গ রাসায়নিক কাজ), স্কুল এবং কলেজ এবং জাদুঘর। এছাড়াও বৃষ্টির জল সংগ্রহের ব্যবস্থা, সৎসঙ্গ আশ্রমের বেদ ভবন, বেদ অধ্যয়ন ও আবৃত্তির জন্য নিবেদিত বেদ ভবন, সৎসঙ্গ গ্রন্থাগার, কৃষ্টিবান্দাব নাট্যশিল্পম (সঙ্গীত ও নাটকীয় প্রতিষ্ঠান), সৎসঙ্গ প্রেস, সৎসঙ্গ কার্পেনট্রি, প্রকৌশল ও যান্ত্রিক কর্মশালা, সৎসঙ্গ গ্যারেজ, গোশালা (গোশাল) এর মতো অন্যান্য কেন্দ্র ও সুবিধা রয়েছে।

সৎসঙ্ঘের উৎসব ও পার্বণ

সারা বছর ধরে সৎসঙ্গ আশ্রমে বেশ কিছু অনুষ্ঠান পালিত হয়। সৎসঙ্গ আশ্রমে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, তাঁর স্ত্রী (শ্রীশ্রী বোরোমা), তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র (শ্রীশ্রী বোর্দা) এবং বর্তমান আচার্যদেবের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনের ঘটনা সম্পর্কিত অন্যান্য উৎসব, ঋত্বিক সম্মেলনও পালিত হচ্ছে। দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত আশ্রমে উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সাধারণত সৎসঙ্গ আশ্রমে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।